শিরোনাম
MD: SAIFUL | ০৮:৩৮ এএম, ২০২০-০৪-০৪
* বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নামছেন
* পৌঁছেনি সহায়তা,
* মানবিক নন অনেক মালিক
* বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করা হচ্ছে গ্যারেজ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কার্যত লকডাউন সারা দেশ। রাস্তায় চলছে না যানবাহন। বন্ধ অফিস-আদালত। সামান্য কিছু রিকশা চললেও প্রায় বন্ধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ফলে ঘরবন্দি হয়েই দিন কাটছে এসব বাহনের চালকদের।
ঘরে খাবার নেই, বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। বের হলেও ভাড়া যাওয়ার যাত্রী নেই, এমন অবস্থায় সংকটে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। যেসব চালক লুকোচুরি করে অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে রাস্তায় নামছেন তারা মালিকের জমার টাকাও তুলতে পারছেন না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষগুলোর অমানবিক জীবনযাপনের চিত্র।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের প্রত্যেকেই নিম্নআয়ের মানুষ। তবে তাদের জীবন গল্পে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা।
রাজধানীতে তিন চাকার বাহনের বেশিরভাগই রিকশা। সাধারণত রিকশাচালকরা খুবই নিম্নআয়ের মানুষ হয়ে থাকেন। যাদের দৈনিক আয় ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা কিছুটা বেশি আয় করেন। তাদের আয় ৬০০-১০০০ হাজার টাকার মধ্যে।
তবে এই বাহন অবৈধ হওয়ায় প্রায়শই পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের দৈনিক আয় ১৪০০-১৮০০ টাকার মধ্যে থাকে। ফলে অন্য দুই শ্রেণির থেকে তাদের আয় ও জীবনযাত্রার মান ভালো। এটি সাধারণ চিত্র। সময় ও চাহিদা অনুযায়ী এ হিসাবে তারতম্যও দেখা যায়।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে রিকশা ও গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৬ লাখের বেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে রিকশাচালকরা দিনে মহানজনকে ১০০-১২০ টাকা জমা দিয়ে চলার মতো টাকা হাতে থাকত। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিকদের দৈনিক জমা দিতে হয় ৩০০-৩৫০ টাকা।
আর স্থানভেদে সিএনজি চালকদের জমা ৬০০-৮০০ টাকা। ফলে পরিবার নিয়ে সচ্ছল জীবনযাপনই ছিল তাদের। এখন এই তিন বাহনের চালকেরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকে আয়ের চিত্র পাল্টে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, দৈনিক জমার টাকাই তুলতে পারছেন না তারা।
শুক্রবার দুপুরে রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে কথা হয় রিকশাচালক জহির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনার পর থেকে দু’দিন তিনি ঘরেই ছিলেন। কিন্তু কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। এখন দৈনিক ১১০ টাকা মহাজনকে দিতে হয়। অথচ বেশিরভাগ দিনই দু’শ-আড়াইশ’ টাকার উপরে আয় হয় না। এতে কোনোমতে সংসার চলছে। তাও পুলিশ মাঝেমাঝেই রাস্তায় ধরছে। বের হওয়ার কারণ জানতে চাইছে।
তিনি জানান, আয় হোক বা না হোক রাস্তায় নামলেই মহাজনের টাকা দিতে হয়।
গুলিস্তানে কথা হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক রবিউলের সঙ্গে। তিনি বলেন, দু’দিন ধরে ঘরে কোনো খাবার নেই। বিস্কিট খেয়ে ছিলাম। অল্প কিছু চাল থাকলেও সঙ্গে খাওয়ার মতো কিছু ছিল না। টাকাও ছিল না। তাই চাল ভেজে পরিবার নিয়ে খেয়েছি। এখন রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, মালিককে প্রতিদিন ৩০০ টাকা জমা দিতে হয়। অথচ সকাল থেকে সেভাবে ‘খ্যাপ’ (ভাড়া) পাচ্ছি না। কিন্তু ভাড়া তো দিতেই হবে। তিনি কারও থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলেও জানান।
বাড্ডায় কথা হয় আরেক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মোতালেব হোসেনের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। এই এলাকার চিত্র অবশ্য কিছুটা আলাদা। অটোরিকশা দ্রুত যাওয়ায় তিনি মোটামুটি ভালোই ভাড়া পাচ্ছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, সরকার বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করলেও আমাদের উপায় নেই, এ জন্য বের হয়েছি। নিজের উপার্জনের টাকায় রিকশাটি কেনা।
যার ফলে মালিককে ভাড়া দেয়ার চিন্তা নেই। সময়ভেদে দৈনিক ৫০০ টাকার মতো আয় হচ্ছে। তবে যেসব চালকের মালিককে জমার টাকা দিতে হয়, তাদের অবস্থা খুব খারাপ। কারণ, অনেক সময় দেখা যায়, তারা জমার টাকাটাও তুলতে পারছে না।
রাজধানীর নয়াবাজার এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. রাকিব জানান, এই ক’দিন তিনি রাস্তায় নামেননি। পুলিশ পেটালেও এখন অনেকটা নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কারণ, পরিবারে খাওয়ার মতো কিছু নেই। প্রথমদিকে মালিক সমিতি একবার কিছু সহযোগিতা করেছে। এরপর আর খোঁজ নেয়নি।
তিনি বলেন, দৈনিক ৬৫০ টাকা করে মালিককে জমা দিতে হয়। অথচ দুপুর পর্যন্ত আয় হয়েছে দেড়শ’ টাকা। মালিককে বললে তিনি ৪০০ টাকা জমা দিতে বলেছেন। কিন্তু সেটাও উঠবে কি না, বুঝতেছি না। সব মিলিয়ে হয়তো এক-দেড়শ’ টাকা থাকতে পারে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় রিকশা বেড়ে যাওয়ায় গ্যারেজ বন্ধের খবর পাওয়া গেছে। যাতে করে রাস্তায় মানুষের চলাচল আরও সীমিত করা যায়। এর ফলে যেসব রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক রাস্তায় নেমে সামান্য আয়ের সুযোগ পেতেন, তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজধানীর তেজগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। এ অবস্থায় পুলিশ বলছে, তারা নিম্নআয়ের মানুষের পাশে আছে। তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা থাকবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত